আমি যদি ওসমান হতাম!!!

“আমরা কা’বার যিয়ারত করতে এসেছি। আমরা আমাদের আদি পিতা ইব্রাহিমের পথে চলতে এসেছি। আমরা কা’বার ইজ্জত বাড়াতে এসেছি “ – মদীনার এই কাফেলার আওয়াজ পাপিষ্টরা কেউ শুনলনা। “দেখো আমাদের সবার ইহরাম বাধা, আমাদের উটের গলায় কিলাদা(কুরবানীর চিহ্ণ) লাগানো,আমরা কারো সাথে যুদ্ধ করতে আসিনি। আমরা কা’বার তাওয়াফ করতে এসেছি। আমরা আরাফাহর ময়দানে সমবেত হতে এসেছি। আমরা সাফা-মারওয়ায় মা হজেরার কষ্ট বুঝতে এসেছি, আমরা জমজমের পানিতে ইসমাঈলের জন্য আল্লাহর রহমত প্রত্যক্ষ করতে এসেছি।”
মক্কার অভিজাত কাফের, যারা বংশগৌরবের অহংকারে মত্ত , যারা শতাব্দীকাল ধরে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে, তারা কি আর ন্যায় বুঝে। হাজার বছর ধরে চলে আসা যুদ্ধ বিরতি ‍চুক্তি কি তারা বুঝে?
তবুও মদীনার এই কাফেলা , ধৈর্যহারা হয় নি। ওসমান ইবনে আফফান চললেন শান্তির সমন নিয়ে। ভীরু,কাপুরুষরা ওসমানকে মানা করলেন। কিন্তু যার হৃদয় রাসুল প্রেমে সিক্ত, যিনি জানেন দুনিয়ার প্রথম বিপ্লবী মুসলিমগোষ্ঠী যারা ইতিহাস পরিবর্তন করে দিবে, তাদের কোন সদস্য কি ভয়ে পিছিয়ে যাবে? কক্ষনো না বিপ্লবীরা কখনো পিছপা হবে না।
  ওসমান গিয়েছে, দুইদিন হয়ে গেলো, কোন খবর এখনো আসল না। ওসমান কি আটক হয়েছেন, ওসমান কি আহত হয়েছেন, নাকি ওসমানকে………………… ভাবতেই ওসমানের বিপ্লবী সাথীদের কলিজা হিম হয়ে আসলো। ……..‘‘ওসমান তিনি তো আমাদের প্রিয় সাথী , তার কোন অনিষ্ঠ হতে পারে না। ওসমান তো আমাদের সহযোগী বন্ধু, আমাদের গোলামীর জিঞ্জির থেকে মুক্তিদাতা। ওসমান তো আমাদের কষ্টে কাদতো এমন একজন। তাঁর কোন অনিষ্ঠ হবে , এটা অসম্ভব”
বেলা গড়ালো, আস্তে আস্তে পুরো কাফেলায় গুঞ্জন শুরু হয়ে গেলো। একজন, দু’জন করে চৌদ্দশ জনের কানে গেল। “কি! ওসমানকে শহীদ করা হয়েছে?” এখন তো আর ধৈর্য ধরার সময় নয়। হুদাইবিয়ার আকাশ-বাতাস নীরবে চিৎকার করছে প্রতিশোধ! প্রতিশোধ! রবে। মক্কার পথের পাথরগুলো ওসমানের প্রতিশোধের তাড়নায় ফেটে গেলো। আকাশে শকুনেরা কাফেরদের লাশের জন্য ভীড় জমাতে শুরু করলো। কখন , যুদ্ধ শুরু হবে? প্রতিশোধ নেওয়া হবে? প্রকৃতি যেনো ওসমানের জন্য হাহাকার করে উঠলো। নবীজী স. সকলকে ডাকলেন। ডাকলেন , আর শপথ নিলেন। যতক্ষণ না ওসমানের হত্যার প্রতিশোধ নেওয়া না হবে, ততক্ষণ আমরা পিছু হটবো না। আমাদের কাছে যুদ্ধাস্ত্র নেই তো কি হয়েছে, আমরা ওসমানের হত্যার প্রতিশোধ নিবো।
আহা, কী তেজ! কী সাহস! কী উদ্দীপনা!  বাইয়াতে রিদওয়ানের সে বাইয়াতে যদি আমিও থাকতাম। সেই বিপ্লবীদের মতো যদি আমি হতে পারতাম। আমার সাথীদের জন্য, আমার আহলদের জন্য, আল্লাহর দ্বীনের জন্য।
 মদীনার এই কাফেলার বাইয়াতের কথা মক্কার কুলাঙ্গার আভিজাত্যে ভীতির সঞ্চার করলো। তারা জানিয়ে দিলো যে, ওসমানকে হত্যা করা হয়নি। মদীনার কাফেলার সিপাহসালারের কাছে , মক্কার পাপিষ্টরা হুমড়ি খেয়ে পড়লো। তারা সিপাহসালারের (স.) কাছে সন্ধির প্রস্তাব আনলো। এটা এমন এক চুক্তি যেটা স্পষ্ট বিজয়।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান